
আসুন সিলেটে সেবা করতে থাকি যেন সিলেট স্বেচ্ছাসেবী শহর হয় উঠে ।
অতীতের কিছু প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, ভালো মন্দের স্মৃতি নিয়ে আরেকটা নতুন বছরের শুরু। ধর্ম-বর্ণ, ধনী-গরীব, ছোট-বড় গোত্র নির্বিশেষে বাঙ্গালী জাতির ঐতিহ্য নিয়ে নববর্ষ আমাদের দরজায় হাজির হয়, ভেদাভেদভুলিয়ে আমাদের এক করে। নববর্ষের ডাকে সাড়া দিয়ে নতুন বর্ষ বরণে দেশের আনাচে কানাচে চলে নানা আয়োজন। সব শ্রেণীর মানুষ ভেদাভেদ ভুলে নববর্ষের আনন্দে সামিল হয়ে থাকলেও আমাদের সমাজের একটি অংশ সবার অগোচরে বঞ্চিত হয়ে থাকে। বঞ্চিত হয় পথে থাকা শিশুরা।
অধিকার বঞ্চিত শিশুদের সব ধরণের সেবায় বদ্ধপরিকর পথশিশু সেবা সংগঠন। গত ১০ বছর ধরে রাস্তায় নিয়মিত কাজের পাশাপাশি পথশিশুদের নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় উৎসব পালন করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় এই বঞ্চিত শিশুদের মাঝে নববর্ষে আনন্দ পৌঁছে দিতে পথশিশু সেবা সংগঠনের আজ ছিল বিশেষ আয়োজন। সকাল হতেই পথশিশু সেবা সংগঠনের ঢাকায় নিয়মিত সেবা দেওয়া ৫ টি স্পট থেকে শিশুদের নিয়ে আসা হয় চন্দ্রিমা উদ্যানে। পাশাপাশি শেল্টার হোমে পুনর্বাসিত শিশুদেরও নিয়ে আসা হয়।
সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী ও শিশুরা অনুষ্ঠান স্থলে পৌঁছার পর পরিচয় পর্বের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। পরিচয়পর্ব শেষে শিশু ও স্বেচ্ছাসেবীরা একসাথে সকালের খাবার গ্রহণ করে। পরবর্তীতে তিনটি দলে ভাগ হয়ে শিশুরা স্বেচ্ছাসেবীদের সহযোগিতায় তৈরি করে ঘুড়ি, চরকি, ডুগডুগি। এরপর শুরু হয় খেলাধুলা পর্ব; মিউজিকের সাথে বল বদল, বিস্কুট দৌড়। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণী। এরপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিশুরা একে একে পরিবেশন করে নাচ, গান, নাটক, গল্প, কবিতা আবৃত্তি। আর এর মধ্য দিয়ে তাদের জীবনের গল্প উঠে আসে। শিশুরা গাইতে থাকে ‘লাত্তি গুতা মেরো না ভাই কষ্ট লাগে ও ভাই তোমরাও মানুষ আমরাও মানুষ’, গানটি যেন এই বঞ্চিত শিশুদের নিয়ে নতুন করে ভাবার অনুপ্রেরণা যোগায়।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর দুপুরের আহার পর্ব শুরু হয়। সব শেষে শিশুদের নববর্ষের উপহার দিয়ে তাদের নিজ নিজ স্থানে পৌঁছে দেয়া হয়। বঞ্চিত শিশুদের মাঝে নববর্ষের আনন্দ পৌঁছে দিতে এটি ছিল সংগঠনের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে পথশিশু মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে কাজ করে চলেছে পথশিশু সেবা সংগঠন। স্বপ্ন দেখে একদিন ভালবেসে সেবাদানের এই কাজ বৃহৎ আকারে ছড়িয়ে পড়বে দেশের সব প্রান্তে। পথের পরিবর্তে শিশুদের আশ্রয় হবে কোন ঘরে। আদর, যত্নে আর ভালবাসায় বেড়ে উঠবে সকল শিশু।
লেখা: স্বেচ্ছাসেবী আকরাম হোসেন
১৬ ডিসেম্বর, শুক্রবার সকাল বেলা সংসদ ভবনের সাজসাজ রব চারদিকে। বিজয়ের উচ্ছাসের জোয়ার ছড়িয়ে পড়ছে চতুর্দিকে। পথশিশুরা তবে কেন বঞ্চিত হবে এই বিজয় উৎসব থেকে? তাদের মধ্যেও উচ্ছ্বাস, আনন্দ, আর খুশির ছোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছিল।
সমবেত জাতীয় সংগীত দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। তারপর বিজয় দিবস সম্পর্কে আলোচনা হয়। সকালের আহার দিয়ে অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বের সমাপ্তি ঘটে।
চারটি আলাদা দলে বিভক্ত হয়ে দ্বিতীয় পর্বের শুরু হয়। দ্বিতীয় পর্বে চারটি আলাদা পর্বের কাজ যথাক্রমে মানচিত্র রঙ, পাতা এবং ফুল দিয়ে পতাকা ডিজাইন, শহীদ মিনার তৈরী, পতাকা তৈরী করা। এটা শেষ হওয়ার পর শিশুদের জাদু দেখান উলফাত কবির। শিশুরা জাদু খুবই উপভোগ করে।
এদিকে শিশুদের বাছাইকৃত ছবি নিয়ে প্রদর্শনী চলছিলো সেখানে বেশ মানুষদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। পাশাপাশি যারা পথশিশুদের প্রতি যত্নশীল হতে চায় তাদের জন্য “বিজয় দিবসের অঙ্গীকার পথশিশুদের অবহেলা করবো না আর।” এই অঙ্গীকারের স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়।
প্রচার কাজও চলেছে …. তারপর পথশিশুদের অধিকার নিয়ে বর্ণাঢ্য এক র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। সবশেষে দুপুরের আহার দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ করা হয়।
বিজয় দিবসে আমাদের প্রত্যাশা পথশিশু মুক্ত বাংলাদেশ রচনা। আমরা চাই কাঙ্খিত ক্ষুধা মুক্ত বাংলাদেশ। সহনশীলতা, ভালোবাসা, সম্প্রীতি, আদর, স্নেহ ছড়িয়ে দিয়ে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে একটি সুন্দর আগামী বাংলাদেশ গড়বোই আমরা।
আপনিও ভালোবাসার এই স্রোতে শামিল হোন।
শিশুরা এতো সকালেই দলবেঁধে উচ্ছ্বাসে কোথায় যেন ছুটে যাচ্ছে! আনন্দ আর হাশিখুশি পরিবেশ। ও আচ্ছা আজ তো চিড়িয়াখানায় আমাদের শিশুদের নিয়ে পিকনিকের দিন।
একসাথে সকালের নাস্তা দিয়েই কার্যক্রম শুরু হয়।
তারপর বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে চিড়িয়াখানা দেখার পালা। কারো চোখে বিষ্ময় ওরে বাবা এতো বড়ো জলহস্তী! কেউ বাঘ দেখে, কেউ সিংহ দেখে, কেউ সাপ দেখে বিষ্মিত! ওরে বাবা এতো বড় উঠপাখি! ময়ূর পাখি, কুমির, গন্ডারসহ গোটা চিড়িয়াখানায় আরো কতো জানা অজানা প্রাণীর দেখা মিললো। তারপর চিড়িয়াখানার জাদুঘর দেখেই চিড়িয়াখানা দেখার ইতি টানা হলো।
শিশুদের গান ও নাটিকা দিয়ে দ্বিতীয় পর্ব সাজানো হয়। আনন্দঘন পরিবেশে গানের কলি নিয়ে খেলা শুরু হয়।
অনেক হলো এইবার হাত পরিস্কার করতে হবে যে, কারণ দুপুরের খাবার সময় হয়ে এলো! একসাথে সবাই মিলে আহারের এক অন্যরকম আনন্দ।
এভাবেই আনন্দ, উৎসব আর শিশুদের উচ্ছ্বাসে একটি ভালোবাসাময় দিনের সমাপ্তি হয়। এভাবেই অনেক চমৎকার রঙিন মুহুর্তের সৃষ্টির পর ঘরে ফেরার সময় হয়ে এলো।
২ অক্টোবর পথশিশু দিবস। পথশিশু সেবা সংগঠন এই দিবসে শিশুদের অধিকার, তাদের দাবী এবং মনের কথা প্রকাশের জন্য বাংলা একাডেমীর বিপরীতে এই দিবসটি পালন করে।
চিত্র অঙ্কন, চিত্র প্রদর্শনী, গান, সচেতনতামূলক নাটক, বিনোদন, স্বেচ্ছাসেবী এবং শিশুদের একসাথে খাওয়া -দাওয়া আরো নানারকম কার্যক্রম দিয়ে ভরপুর ছিলো দিবসটি। এই দিনে একটাই প্রত্যাশা যেন কখনো আর দিবস পালন করতে না হয়। আমরা স্বপ্ন দেখি একদিন বাংলাদেশ পথশিশু মুক্ত হবে। পথশিশু নয় স্বাভাবিক শিশুর মতো আদর, স্নেহ আর ভালোবাসায় বেড়ে উঠবে তারা।
আপনিও পথশিশুদের সেবায় এগিয়ে আসুন।
ধন্যবাদ 🙂
পথশিশুদের সেবার মান উন্নয়ন এবং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সংগঠন বিভিন্ন সময় স্বেচ্ছাসেবীদের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে। গত ২৯.০৭.২০১৬ তারিখ শুক্রবার প্রায় দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছিলো। প্রশিক্ষণসূচী বেশ চমৎকার ছিলো।
– আচরণ ব্যবস্থাপনার সূচনা পদ্ধতি,
– ভালো শ্রোতা হও,
– আচরণ ব্যবস্থাপনা,
– শিক্ষা,
– স্বেচ্ছাসেবীদের পারস্পরিক যত্ন,
– কাউন্সেলিং,
– শিশুদের বিভিন্ন খেলাধূলা পরিচিতি,
– হ্যান্ডিক্রাফটস ( হাতে বানানো বিভিন্ন খেলাধূলা),
– ছবি আকাঁ
এই সকল বিষয় নিয়ে পুরো দিনে চমৎকার এক প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরিচালিত হয়।
আমরা আশাবাদী স্বেচ্ছাসেবীরা বিভিন্ন বিষয়ে যে জ্ঞান আহরণ করেছে তা শিশুদের মাঝে সেবা এবং ভালোবাসা বিতরনের মানকে আরো বৃদ্ধি করবে।
ধন্যবাদ।